সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানের ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানের যুবরাজ হওয়ার এক বছর পূরণ হলো গতকাল বৃহস্পতিবার। এই এক বছরে তিনি এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা রক্ষণশীল সৌদি আরবকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। তাঁর হাত ধরেই পরিবর্তনের পথে হাঁটছে দেশটি।
গত বছর রাজকীয় আদেশ জারি করে বাদশাহ সালমান তাঁর ভাতিজার বদলে ছেলে বিন সালমানকে উত্তরসূরি হিসেবে মনোনীত করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩১ বছর। তরুণ যুবরাজ দেশের তরুণ-তরুণীদের কথা ভেবে একের পর এক সংস্কার কার্যক্রম ঘোষণা করেছেন। তরুণ সম্প্রদায়কে চাকরি ও মুক্তজীবনের স্বাদ দিতে তাঁর এসব উদ্যোগ এখন পর্যন্ত সফল।
ভিশন ২০৩০-এর মাধ্যমে সৌদির সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করেছেন এই যুবরাজ। এর লক্ষ্য যুব সম্প্রদায়ের অধিক সংখ্যকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। নাগরিকদের বিনোদনের জন্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন তিনি। তাঁর কল্যাণেই নারী-পুরুষ এখন কনসার্টে যেতে পারেন। সৌদিতে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে এ বছরের ২৪ জুন থেকে গাড়ি চালাতে রাস্তায় নামতে পারবেন সৌদি নারীরা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে সৌদির প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা, বুদ্ধিজীবীসহ ২০ জনকে আটক করা হয়। নভেম্বরে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে রাজপরিবারের সদস্য, মন্ত্রী, ধনকুবেরসহ প্রায় ৩৮০ জনকে আটক করা হয়। দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষের প্রধান হিসেবে বিন সালমানের নির্দেশে এই ধরপাকড় চলে। সে সময় তাঁদের বেশির ভাগ রিয়াদের বিলাসবহুল রিটজ-কার্লটন হোটেলে বন্দী ছিলেন। তাঁরা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ছাড়া পান বলে অভিযোগ আছে।
শুধু দেশেই নিজের কার্যক্রম সীমিত রাখেননি বিন সালমান। পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন তিনি। তাঁর জমানায় সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে সৌদি আরব তার তিন মিত্রকে নিয়ে কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে। গত নভেম্বরে রিয়াদ সফরে গিয়ে টেলিভিশন ভাষণে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বসেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। এ ঘটনার পেছনেও ছিলেন সৌদি যুবরাজ। একসময় খবর ছড়ায়, হারিরিকে আটক করা হয়েছে। পরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর হস্তক্ষেপে নিজ দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন হারিরি।
সৌদি যুবরাজ গত বছরের নভেম্বরে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের হাতে আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করছে দেশটি। ইরানের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে এ বছরের মার্চে বিন সালমান বলেন, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে, রিয়াদও একই কাজ করবে। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সিবিএস টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেন। গত এক বছরে তিনি মিসর, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও স্পেন সফর করেছেন। এ ছাড়া এই যুবরাজ ফিলিস্তিন বিষয়ে সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তনের কথা বলেছেন। এ বছরের এপ্রিলে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের মতো ইসরায়েলিদেরও ‘নিজস্ব ভূমির অধিকার’ আছে।